বৈপরীত্য
"পারবি তো?"
"হ্যাঁ,পারব।"
"দেখিস,ঘাপলা বাঁধাইস না।"
"কোনদিন বাঁধাইসি?"
"না বাঁধাস নাই,তবুও।"
"রাখেন,দেরি হয়ে যাচ্ছে।"
বিরক্ত হয়ে ফোনটা কেটে দিল জাহাঙ্গীর।বড় মানুষদের এটাই সমস্যা।অযথা টেনশন করে।ও যে লাইনে আছে,সেই লাইনে ওর থেকে উপরে কেউ উঠতে পেরেছে?সাক্ষাৎ যমদূত ও।মাথা থেকে এসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিল।কাজ করার আগে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়।বিশাল বাড়িটার ভেতরে ঢুকে গেল সে।একবার কলিংবেল দিতেই দরজা খুলে দিল কাজের মেয়েটা।পা থেকে মাথা পর্যন্ত দ্রুত একবার চোখ বুলিয়ে নিল।মেয়েজাতির প্রতি ওর আলাদা কোনো অনুভুতি নেই।ওরা শুধু খেলার জিনিস,খেলা শেষে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হয়।ভেতরের বিশাল বেডরুমে মস্ত বড় ব্যবসায়ী জহির সাহেব ঘুমাচ্ছেন।কাজের মেয়েটার সাথে আগেই হাত করা ছিল,কফির সাথে কড়া ডোজের তিনটা ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল।এই কফি জিনিসটা জাহাঙ্গীরের খুব বিরক্তিকর লাগে।কড়া লিকারের গরম চায়ের উপর কোনোকিছু নাই।দেশি মদ খেতেও বেশ,সাহেবদের দামি জিনিস ওর পেটে সহ্য হয় না।শোল্ডার হোলস্টার থেকে পিস্তলটা বের করে মাথার পাশে ঠেকাল।না,কোনো অনুভুতি হয় না আর এখন।জিনিসটা ভাত খাওয়ার মত হয়ে গেছে,এফোর্টলেস,নরমাল।ছোট্ট একটা শব্দ হলো,অস্পষ্ট,প্রাণহীন।তারপরেই হলুদ রং এর মগজ আর লাল রক্ত বেরিয়ে এল।সরে গেল সে।আকাশি নীল শার্টটা বেশ দামি,বউ পছন্দ করে কিনে দিয়েছে গত ঈদে।রক্ত অনেক দেখেছে এই জীবনে।এখন একঘেয়ে হয়ে গেছে ব্যাপারটা। কাজের মেয়েটার হাতে দশ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে এল।একটা বেনসন ধরিয়ে কয়েক টান দিয়ে জুতার সাথে পিষে ফেলল।ফোন বেজে উঠল হঠাৎ।বউ ফোন করেছে।বড় মেয়েটার খাতা নাকি শেষ হয়ে গেছে।মেয়েটা লেখাপড়ায় খুব ভালো।ওকে ডাক্তার বানাতে হবে।
প্রিয় ইয়ামাহা বাইকে চড়ে হাইওয়ে ধরে বাসায় ফিরছে।হঠাৎ দেখল,ঠিক তার পাশে একটা ছায়া দৌড়াচ্ছে।ভূত-প্রেতে ওর বিশ্বাস নেই।বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দিল।আশ্চর্য,মানুষটাও গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।হাফপ্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরা ছেলেটা জাহাঙ্গীরের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।
"কাজটা ভালো করলি না রে....."
"কি কাজ?তুই কে?বল কে তুই?হাসছিস কেন?বল......"
ছেলেটা হা হা করে বত্রিশ পাটি দাঁত দেখিয়ে হাসছে।কুত্তার বাচ্চাকে একটা গুলি করে মেরে ফেলতে পারলে ভালো হত।
ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পরা কামাল সাহেব মিটিং শেষে বেরিয়ে এলেন।এলাকার কিছু মানুষ এসেছিল,মসজিদ বানানোর জন্য টাকা খুঁজতে।তিনি বলেছেন,দেবেন।সওয়াব কামানো দরকার।ড্রয়িংরুমের দিকে তাকালেন।তার ছোট্ট দুই ছেলেমেয়ে ডিসকভারি চ্যানেল দেখছে।একটা বাঘ একটা হরিণকে তাড়া করছে।বাঘটার মুখ হরিণটার গলার কাছাকাছি চলে এসেছে।মেরে ফেলল,মেরে ফেলল........ভয়ে ছেলেমেয়ে দুটোর চোখ বন্ধ হয়ে গেলো।কামাল সাহেব চুকচুক করে আফসোসের শব্দ করলেন।
Comments
Post a Comment