ফুল

লম্বা লাইটপোস্টগুলো থেকে আলো এসে পড়ছে রাস্তায়।চাকা চাকা আলো।খুঁটিগুলো বেশ দূরে দূরে।মধ্যিখানের ঘনক্ষেত্রে অন্ধকারের ঘরবসতি।


-এ কী?এসব কী?

-ফুল

-ফুল?আমার জন্যে?

-হ্যাঁ,খালি হাতে আসাটা খারাপ দেখায়

-খালি হাতে আসাটা খারাপ দেখায়?আর না বলে মাঝরাতে    মেয়েদের বাসায় লুকিয়ে চলে আসাটা খুব ভালো দেখায় বুঝি?

-লুকিয়ে আসিনি তো..সামনের দরজা দিয়েই এসেছি।

-বাবা দেখেছে তোকে?

-না...খেয়াল করেননি বোধহয়...টিভি দেখছিলেন

-ভাগ্যিস দেখেনি...দেখলে কী যে হত!


নীরা খাট থেকে উঠে দাঁড়াল।প্রাচীন পেতলের ফুলদানি থেকে বাসি গোলাপের ঝাড়টা তুলে রাখল।বোতল থেকে পানি ঢালল একটু।তারপর ফুলগুলোর স্থান হলো তার দাদির প্রিয় ফুলদানিতে।বাগানবিলাস।লাল,সাদা,কয়েকটা বেগুণি।ম্লান,শুকনো,চেনা।


-কোথায় পেয়েছিস ফুলগুলো?

-মনে নেই..কিচ্ছুটি মনে নেই...হঠাৎ দেখলাম তোর বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি..এর আগের কথা কিচ্ছু মনে নেই...হয়তো তোকে ফুল দেওয়ার কথা ছিলো বলেই..


নীরা হাত ধরে রৌদ্রকে খাটে বসাল।সঙ্কোচভরে,মুচকি হেসে খাটে বসল রৌদ্র...ছেলেটার পা দুটো ভীষণ চঞ্চল..সর্বক্ষণ নড়ছে।


-আমার জন্য কিছু না এনে তুই থাকতে পারিস না?খারাপ লাগে খুব বুঝি?


রৌদ্র মুখ তুলল না।নীরা হাসল।


"আনতে ইচ্ছে করে খুব।ফুল ছাড়া আর কিছু তো আনতে পারি না।আজ কেন যে বাসি ফুল আনলাম?ধ্যাত।"


 'কেন' এর উত্তর নীরা জানে।ফুলগুলো সে রেখে এসেছিলো।কবরস্থানে একটা ভেজা মাটির কবরে,সকালবেলায়।ফুলগুলো টাটকা ছিলো তখন।কবরের ভেজা মাটির মত,মার্বেল পাথরের প্লেটে কালো অক্ষরে খোদাই করা রৌদ্র হাসানের নামটার মত।


নীরা কাল সন্ধ্যায় ওখানে বেশ কয়েকটা বাগানবিলাস রেখে আসবে,রাত পর্যন্ত তাজা থাকবে তাহলে।

Comments

Post a Comment

Popular Posts